বীজ সংরক্ষণের লোকজ রীতি

কৃষিকাজে কৃষকরা নিজেদের জ্ঞান ব্যবহার করে বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে থাকেন। দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকেরা একটি বিশেষ পদ্ধতিতে গোলাঘরে বীজ সংরক্ষণ করেন। খুব অল্প খরচে এ পদ্ধতি ব্যবহার করা যায় এবং বীজের গুণগত মানেরও কোনো ক্ষতি হয় না। এ পদ্ধতির মাধ্যমে কোনোপ্রকার রাসায়নিক দ্রব্য ব্যবহার না করে বীজ সংরক্ষণ করা সম্ভব।

গোলা ঘরে বীজ সংরক্ষণ প্রক্রিয়া

১ম ধাপ

গোলাঘরের আর্দ্রতা রোধ করার জন্য এবং পোকা-মাকড়ের আক্রমণ কমানোর জন্য তৈরি করা হয়। মাটি থেকে এক-দেড় ফুট উচুতে ৬ থেকে ৮টি পিলারের মতো গোল মোটা কাঠ বা গাছের গুঁড়ির ওপর পাটাতন বানিয়ে তার ওপর এই গোলাঘর তৈরি করতে হবে।

২য় ধাপ

পিছনে আড়াআড়ি কয়েকটি কাঠের তক্তা পেতে বাঁশের খন্ড দিয়ে গোলাঘরের পাটাতন তৈরি করতে হবে।

৩য় ধাপ

গোবর ও ধানের তুষ মিশিয়ে পাটাতনের মেঝেতে এমনভাবে প্রলেপ দিতে হবে যেন পাটাতনের নীচ দিয়ে বাতাস ঢুকে গোলা ঘরের সংরক্ষিত শস্য নষ্ট করতে না পারে ।

৪র্থ ধাপ

পাটাতন শক্ত ও মজবুত করার জন্য কাঁচা গাব ফলের কষ দিয়ে লেপে দিতে হবে। এটা একটি বিশেষ কায়দায় তৈরি করা হয়। প্রথমে কাঁচা গাব ছেঁচে পানিতে একদিন ভিজিয়ে রাখতে হবে। এরপর গাব মিশ্রিত পানি দিয়ে পাটাতনে প্রলেপ দিলে পাটাতন মজবুত হয় এবং পোকামাকড়ের আক্রমন থেকে রক্ষা পাওয়া যায়।

৫ম ধাপ

এরপর পাটাতনের ওপর বাঁশের চাটাই দিয়ে গোলা ঘরের জন্য গোলাকার বেড়া তৈরি করতে হবে।

৬ষ্ঠ ধাপ

গোলাঘরের চালের ছাউনি হিসেবে ধানের খড়, নাড়া অথবা গোলপাতা ব্যবহার করতে হবে।

৭ম ধাপ

ছাউনির মাথার একটি পাত্র এমনভাবে রাখতে হবে যেন ঝড় বা বাতাসে গোলঘরের ছাউনি উড়ে না যায়।

৮ম ধাপ

সাধারণত একটি গোলাঘরের উচ্চতা ৮-৯ ফুট, নিচের অংশের দৈর্ঘ্য ৮-১০ ফুট এবং প্রস্থ ৯-১২ ফুট হয়ে থাকে।

কোন কোন ফসল সংরক্ষণ করা যায়

সারা বছরের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত ধান গোলায় খোলা অবস্থায় রাখা হয়। আর বীজ ধান রাখা হয় বস্তায় ভরে। গোলাঘরের নীচে পাটাতনের ফাঁকা জায়গায় ওল, মুখিকচু ও হলুদসহ নানা ধরণের কন্দাল ফসল বীজ সংরক্ষণ করা হয়।

সতর্কতা

গোলায় সংরক্ষিত ফসল বীজ মাঝে মধ্যে বের করে রোদে শুকাতে হয়।

উপকারিতা

গোলা ঘরে ধান বীজ রাখলে বীজ ভালো থাকে।
শোবার ঘরে ধান রাখলে ইঁদুর ও সাপের প্রকোপ বেড়ে যায়। তাই গোলাঘরে বীজ সংরক্ষণ নিরাপদ।
বাড়ির আঙ্গিনায় একাধিক গোলা ঘর সমাজে গৃহস্থের আর্থিক স্বচ্ছলতা প্রকাশ করে।

সচরাচর জিজ্ঞাসা

প্রশ্ন ১ : কোন অঞ্চলের কৃষকেরা গোলাঘরে লোকজ পদ্ধতিতে বীজ সংরক্ষণ করেন?

উত্তর : দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলীয় অঞ্চলের কৃষকরা।

প্রশ্ন ২ : এ পদ্ধতিতে কি কি ফসল সংরক্ষণ করা যায় ?

উত্তর : ধান, ওল, মুখিকচু, ও হলুদসহ নানা ধরণের কন্দাল ফসলের বীজ সংরক্ষণ করা যায়।

প্রশ্ন ৩ : গোলায় ফসল সংরক্ষণ করতে হলে কি ধরণের সতর্কতা অবলম্বন করতে হয় ?

উত্তর : গোলায় সংরক্ষিত বীজ মাঝে মধ্যে রোদে বের করে শুকাতে হয়।

তথ্যসূত্র ও কৃতজ্ঞতাঃ

কৃষি তথ্য সার্ভিস, মাঠ গবেষণা, তথ্যদাতা- মোঃ আবুল কাসেম, শ্যামনগর,সাতক্ষীরা|

Leave a Comment

You must be logged in to post a comment.