ষ্টল ফিডিং পদ্ধতিতে ছাগল পালন
ছাগলকে ঘরে থাকতে অভ্যস্ত করানো ছাগল সংগ্রহের সাথে সাথেই সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় রাখা উচিত নয়। প্রথমে ছাগলকে দিনে ৬-৮ ঘণ্টা চরিয়ে বাকি সময় আবব্ধ অবস্থায় রেখে পর্যাপ্ত খাদ্য (ঘাস ও দানাদার খাদ্য) সরবরাহ করতে হবে। এভাবে ১-২ সপ্তাহের মধ্যে চরানোর সময় পর্যায়ক্রমে কমিয়ে সম্পূর্ণ আবদ্ধ অবস্থায় রাখতে হবে। তবে বাচ্চা বয়স থেকে আবদ্ধ অবস্থায় রাখলে এ ধরনের অভ্যস্ততার প্রয়োজন নেই। বাচ্চার পরিচর্যা: জন্মের পরপরই বাচ্চাকে পরিষ্কার করে শাল দুধ খাওয়াতে হবে। এক মাস পর্যন্ত বাচ্চাকে দিনে ১০-১২ বার দুধ খাওয়াতে হবে। বাচ্চার চাহিদার তুলনায় কম দুধ থাকলে প্রয়োজনে অন্য ছাগী থেকে দুধ খাওয়াতে হবে। তাছাড়া দুধ না পাওয়া গেলে বাচ্চাকে মিল্ক রিপ্লেসার খাওয়াতে হবে। দুধ খাওয়ানোর আগে ফিডার, নিপলসহ আনুষঙ্গিক জিনিসপত্র পানিতে ফুটিয়ে জীবাণুমুক্ত করে নিতে হবে। ১-১.৫ কেজি ওজনের একটি ছাগল ছানার দৈনিক ২৫০- ৩৫০ গ্রাম দুধ প্রয়োজন। ওজন বৃদ্ধির সাথে সাথে দুধের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হবে। বাচ্চার বয়স ৬০-৯০ দিন হলে দুধ ছেড়ে দেবে। সাধারণত ব্ল্যাকবেঙ্গল ছাগীকে প্রয়োজন মতো খাওয়ালে বাচ্চার প্রয়োজনীয় দুধ পাওয়া যায়। বাচ্চার ১ মাস বয়স থেকেই ধীরে ধীরে কাঁচা ঘাস এবং দানাদার খাদ্যে অভ্যস্ত করতে হবে। ষ্টল ফিডিং পদ্ধতিতে ছাগলকে খাওয়নো: ছাগল সাধারণত তার ওজনের ৪-৫% হারে খেয়ে থাকে। এর মধ্যে ৬০-৮০% আঁশ জাতীয় খাবার (ঘাস, লতা, পাতা, খড় ইত্যাদি) এবং ২০-৪০% দানাদার খাবার (কুঁড়া, ভুসি, চাল, ডাল ইত্যাদি)দিতে হবে। দুই বাচ্চা বিশিষ্ট ২৫ কেজি ওজনের ছাগীর দৈনিক প্রায় ১.৫-২.৫ কেজি কাঁচা ঘাস এবং ৩৫০-৪৫০ গ্রাম দানাদার খাদ্য প্রয়োজন হয়। একটি প্রাপ্তবয়স্ক পাঁঠার দৈনিক ১.৫-২.৫ কেজি কাঁচা ঘাস এবং ২০০-৩০০ গ্রাম দানাদার খাদ্য প্রয়োজন। সারণি-১ ছাগলের দানাদার খাদ্যের সাধারণ মিশ্রণ (%) খাদ্য উপাদান শতকরা হার (%) চাল/গম/ভুট্টা ভাঙ্গা ১০.০০ গমের ভুসি/আটা/কুঁড়া ৪৭.০০ খেসারি/ মাসকলাই /অন্য ডালের ভুসি ১৬.০০ সয়াবিন/ তিল/নারিকেল/সরিষা/ খৈল ২০.০০ শুঁটকি মাছের গুঁড়া ১.৫০ ডাই-ক্যালসিয়াম ফসফেট ২.০০ লবণ ১.০০ ভিটামিন মিনারেল প্রিমিক্স ০.৫০ বিপাকীয় শক্তি (মেগাজুল /কেজি) ১০.০০ বিপাকীয় প্রোটিন (গ্রাম/কেজি ৬২.০০ ছাগলের জন্য ঘাস চাষ: ঘাস সরবরাহের জন্য বিভিন্ন জাতের দেশি ঘাস খাওয়ানো যায়। ইপিল ইপিল, কাঁঠাল পাতা, খেসারি, মাসকলাই, দুর্বা, বাকসা ইত্যাদি দেশি ঘাসগুলো বেশ পুষ্টিকর । এছাড়া উচ্চফলনশীল নেপিয়ার, স্পেনডিডা, এন্ড্রোপোগন, পিকাটউলুম ইত্যাদি ঘাস আবাদ করা যেতে পারে। ছাগলকে খড় খাওয়ানো: ঘাস না পাওয়া গেলে খড়কে ১.৫-২.০ ইঞ্চি (আঙুলের দুইকর) পরিমাণে কেটে নিম্নেবর্ণিত পদ্ধতিতে প্রক্রিয়াজাত করে খাওয়ানো যেতে পারে। এজন্য ১ কেজি খড়ের সাথে ২০০ গ্রাম চিটাগুড়, ৩০ গ্রাম ইউরিয়া ৬০০ গ্রাম পানির সাথে মিশিয়ে ইউএমএস তৈরি করে খাওয়ানো যেতে পারে। এর সাথে এ্যালজি উৎপাদন করে দৈনিক ১-১.৫ লিটার পরিমাণে খাওয়াতে হবে। একটি ছাগল দৈনিক ১.০-২.০ লিটার পানি খায়। এজন্য পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করতে হবে। পাঁঠার ব্যবস্থাপনা: যেসব পাঁঠা বাচ্চা প্রজনন কাজে ব্যবহার করা হবে না তাদেরকে জন্মের ২-৪ সপ্তাহের মধ্যে খাসি করানো উচিত। পাঁঠাকে যখন প্রজনন কাজে ব্যবহার করা হয় না, তখন তাকে পর্যাপ্ত পরিমাণে শুধু ঘাস খাওয়ালেই চলে। তবে প্রজনন কাজে ব্যবহারের সময় ওজন ভেদে ঘাসের সাথে ২০০-৫০০ গ্রাম পরিমাণ দানাদার খাবার দিতে হবে। পাঁঠাকে প্রজননক্ষম রাখার জন্য প্রতিদিন ১০ গ্রাম পরিমাণ গাঁজানো ছোলা দেয়া উচিত। পাঁঠাকে কখনই চর্বিযুক্ত হতে দেয়া যাবে না।
তথ্যসূত্র ও কৃতজ্ঞতাঃ বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট, সাভার