সার্ক দেশসমূহের নারিকেলের ক্ষতিকর মাকড় দমণে দু’দিনের আঞ্চলিক বিশেষজ্ঞ পরামর্শ সভা শুরু

ড. নিয়াজ পাশা [ঢাকা, ১০ আগস্ট] আজ দক্ষিণ এশিয়া আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা (সার্ক) এগ্রিকালচার সেন্টার, ঢাকার উদ্যোগে; বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল (বার্ক), বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বারি) এবং কৃষি গবেষণা ফাউন্ডেশন (KGF)-এর যৌথ সহযোগিতায় Regional Consultation Workshop on Mite Management of Coconut in SAARC  member countries বিষয়ে দুই দিন (১০-১১ আগস্ট’১৪) ব্যাপী একটি বিশেষজ্ঞ কর্মশালাশুরু হয়েছে।

’বার্ক’, ফার্মগেট, ঢাকা’র কনফারেন্স রুমে বিশেষজ্ঞ কর্মশালার উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. এস. এম. নাজমূল ইসলাম। সভাপতিত্ব করেন ‘বার্ক’ এর নির্বাহী চেয়ারম্যান ড. মো. কামাল উদ্দিন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ড. মো. রফিকুল ইসলাম মন্ডল, মহা পরিচালক, বারি; সম্মানিত অতিথি হিসাবে KGF-এর নির্বাহী পরিচালক ড. মো. নুরুল আলম বক্তব্য রাখেন। স্বাগত ভাষণ ও সার্ক এগ্রিকালচার সেন্টারের (SAC) সংক্ষিপ্ত কার্যক্রম উপস্থাপন করেন SAC-এর পরিচালক ড. আবুল কালাম আযাদ। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ভারতের তামিল নাড়ু কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ড. কে. রামা রাজু। পরামর্শ সভার (Consultation workshop) লক্ষ্য, উদ্দেশ্য ও অর্থনৈতিক গুরত্বের উপর বক্তব্য রাখেন SAC-র সিনিয়র প্রোগ্রাম স্পেশালিস্ট (উদ্যানতত্ব) নাসরিন আক্তার লিটু ।
কর্মশালায় সার্কভুক্ত বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, মালদ্বীপ, নেপাল, পাকিস্থান ও শ্রীলংকার নারিকেল চাষ ও উৎপাদন বিষয়ক ৫০ জন বিজ্ঞানী অংশ গ্রহণ করছেন এবং ২৫টি রিসার্স পেপারস উপস্থাপন ও পর্যালোচনা করা হবে। কর্মশালা শেষে একটি সমস্বিত সুপারিশমালা প্রণয়ন ও প্রকাশ করা হবে।
বিজ্ঞানীগণ বলেন, সার্ক অঞ্চলে নারিকেলের অর্থনৈতিক গুরুত্ব অনেক বেশী। নারিকেল প্রান্তিক কৃষকের অর্থ ও পুষ্টি যোগায়। চোখে দেখা যায়না ক্ষুদ্র এক প্রকার মাকড় (Mite) কঁচি নারিকেলের খোলের উপর বোঁটার কাছে বৃতির নিচে নিরাপদে অবস্থান করে ভ্রণ বরাবর নরম অংশ হতে রস চুষে নেয়। এতে ফলের গায়ে হলদে সাদাটে মোচাকৃতি দাগ পড়ে এবং তা পরে খোলের উপর বাদামী দাগে রূপ নেয়। বয়স বাড়ার সাথে সাথে তের আকার বৃদ্ধি পেয়ে আঁচড় কাঁটা ফাঁটা দাগের সৃষ্টি। নারিকেল বিকৃত হয়ে, আকারে ছোট ও শক্ত হয়ে যায়। মাকড়ের আক্রমনে ফলন ১৭-২৫ ভাগ কমে যায় এবং আর্থিক তির পরিমান দাঁড়ায় শতকরা প্রায় ৭০-৮০ ভাগ। ফলেব বয়স ছয়মাসের বেশী হলে মাকড় অন্য কোন কঁচি ফলের কাঁদিতে চলে যায়। গাছে ফল না থাকলে কঁচি পাতায় অবস্থান নেয়।
বিজ্ঞানীগণ বলেন, আমাদের দেশের কৃষকেরা নারিকেলে এ ধরণের সমস্যা আগে দেখেন নাই। তাদের ধারণা মোবাইল টাওয়ারের কারণে নারিরকেল এভাবে বিকৃত হয়ে যাচ্ছে। নারিকেলে এ ধারণের তি বা বিকৃতির সাথে মোব্ইাল-ফোন টাওয়ারের কোন সম্পর্ক নাই। ভারত, শ্রীলংকা সহ বিভিন্ন দেশে এ মাকড়ের আক্রমণ মহামারি আকারে ছড়িয়ে পরেছে।
নারিকেলের মাকড় দমণে বিজ্ঞানীদের পরামর্শ হচ্ছে, শীতের আগে আক্রান্ত গাছের ২- ৬ মাস বয়স পর্যন্ত সকল ফল কেটে আগুনে ঝলসিয়ে দিতে হবে। অতঃপর যে কোন মাকড় নাশক যেমন ওমাইট ১.৫ মিলি/লিটার পানিতে মিশায়ে কচি পাতা সহ গাছের মাথা ৩-৪ বার দুইমাস অন্তর স্প্রে করতে হবে। একই সাথে গাছে সুষম সার দিতে হবে। প্রতিবার সার দেয়াার সময় অন্যান্য সারের সাথে গাছ প্রতি ৫০০ গ্রাম নিমের খৈল দিতে হবে। মনে রাখতে হবে যে, মাকড় নিয়ন্ত্রন হলেও গাছে মাকড় আক্রাšত দাগ পড়া যে সকল নারিকেল থাকে তা ত নিয়েই বড় হতে থাকে। পরবর্তীতে গাছে নতুন কাঁদি আসলে তাতে দাগমুক্ত নারিকেল হয়। আশেপাশে আক্রান্ত গাছ থাকলে মাকড়ের আক্রমন আবার দেখা দিতে পারে। তাই এলাকা ভিত্তিক মাকড় দমণ কার্যক্রম গ্রহণ করতে হয়।
দ্বিতীয় দিনের কার্যকরী অধিবেশনটি জয়দেবপুরস্থ ’বারি ’ তে অনুষ্ঠিত হবে।
সংবাদ প্রেরক: ড. নিয়াজ পাশা, সিনিয়র টেকনিক্যাল অফিসার, সার্ক এগ্রিকালচার সেন্টার, ফার্ম গেট, ঢাকা। ফোন: ০১৭২৭ ০৭৪ ৫৮৪; niazpasha@yahoo.com

Leave a Comment

You must be logged in to post a comment.