শিং ও মাগুর মাছের পোনা মজুদ ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা

shingপোনার প্রাপ্যতা
শিং মাছ
এ মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন কৌশল বেশ কয়েক বছর আগেই উদ্ভাবিত হলেও কয়েক বছর আগেও শিং মাছের চাষ তেমন একটা প্রচলন হয়নি। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে ময়মনসিংহ এবং কুমিল্লাতে হ্যাচারিসমূহে প্রচুর শিং মাছ এর পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে, ফলে পোনার প্রাচুর্যতা বাড়ার সাথে সাথে এ মাছের চাষেরও ব্যাপক প্রসার ঘটেছে। পাংগাস মাছের সাথে সাথি ফসল হিসেবে শিং মাছের চাষসহ একক ভাবে শিং মাছ চাষের প্রসারও ঘটেছে। অভ্যন্তরীণ বাজারে এ মাছের চাহিদা বেশি থাকায় এ মাছের চাষ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষ করে শিং মাছের পোনা উৎপাদন কৌশল সহজতর হয়ে আসাতে প্রয়োজনমত পোনা সহজেই পাওয়া যাচ্ছে।

মাগুর মাছ
এ মাছের কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে পোনা উৎপাদন কৌশল বেশ কয়েক বছর আগেই উদ্ভাবিত হলেও মাগুর মাছের একক চাষের তেমন একটা প্রচলন হয়নি। বর্তমানে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে বিশেষ করে ময়মনসিংহ এবং কুমিল্লাতে হ্যাচারিসমূহে স্বল্প পরিসরে এ মাছের পোনা উৎপাদন করা হচ্ছে। শিং মাছের মত এমাছ চাষের প্রসার ঘটে নাই। বর্তমানে পাংগাস মাছের সাথে সাথি ফসল হিসেবেই চাষ হচ্ছে। ভবিষ্যতে পোনা উৎপাদন প্রক্রিয়া সহজ হলে চাষের সম্প্রসারণের সম্ভাবনা রয়েছে কারণ এ মাছের বাজার চাহিদা ব্যাপক।

পোনা সংগ্রহ ও পরিবহন
মাছ চাষে উত্তম ফলাফল নির্ভর করে ভাল মানের বীজের ওপর। কৌলিতাত্বিক ভাবে বিশুদ্ধ পোনা প্রাপ্তি নিশ্চিত করতে হবে। এ জন্য পরিচিত বিশ্বস্ত নির্ভরযোগ্য পোনা উৎপাদনকারীর নিকট হতে পোনা সংগ্রহ করাই উত্তম। পুকুর প্রস্তুতের সময় হতেই পোনার জন্য যোগাযোগ শুরু করতে হবে। ভাল মানের শিং মাছের পোনার জন্য পুকুর প্রস্তুতের সময় থেকেই হ্যাচারির সাথে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় পোনার জন্য অগ্রীম বুকিং প্রদান করতে হবে। অনেক সময় হ্যাচারিসমূহ বুকিং পাওয়ার পর পোনা উৎপাদন করে থাকে। নির্ধারিত দিনে উপযুক্ত পাত্রে পোনা পরিবহন করে পুকুরে মজুতের ব্যবস্থা করতে হবে। অধিকাংশ হ্যাচারি শিং-মাগুর উভয় প্রজাতির মাছের ৭-৮ দিন বয়েসের পোনা বিক্রয় করে থাকেন কিন্তু এ বয়সের পোনা উৎপাদন পুকুরে মজুদ করা উপযুক্ত নয় সে জন্য মজুদ পুকুরের জন্য উপযুক্ত আকারের পোনা প্রাপ্তির জন্য নার্সারিতে পোনা পালনের ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।

উৎপাদন পুকুরে পোনা মজুদ
নার্সারি পুকুরে পোনার আকার ৫-৭ সেমি. হলে পোনা মজুদ পুকুরে ছাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে। পোনা ছাড়ার ঘনত্ব সম্পূর্ণ ভাবে নির্ভর করবে খামারীর মাছ চাষের অভিজ্ঞতা, আর্থিক সচ্ছলতা, মাছ চাষের আগ্রহ, পুকুরের মাটি ও পানির গুণাগুণ এবং চাষের পদ্ধতির ওপর। মজুদ পুকুর প্রস্তুতের ৪-৫ দিন পর পোনা মজুদ করতে হবে। বাণিজ্যিক ভাবে শিং মাছের একক চাষের জন্য শতকে ৪০০-৫০০ টি পোনা ছাড়া যেতে পারে। কৈ বা পাংগাস মাছের সাথে সাথি ফসল হিসেবেও শিং ও মাগুর মাছ চাষ করা বেশ লাভজনক। এেেত্র শতকে ৩০-৫০টি পোনা মজুদ করা যেতে পারে। এ জাতীয় মাছ চাষের েেত্র পুকুরের প্লাংকটনের উপস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য শতকে ১-২ টি সিলভার বা কাতলের পোনা মজুদ করা যেতে পারে।

খাদ্য ব্যবস্থাপনা
মাছের অধিক উৎপাদন পাবার জন্য ভাল পোনার পাশাপাশি ভালমানের খাদ্যের নিশ্চয়তা বিধানও জরুরী। মাছের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য অন্যান্য প্রাণীর ন্যায় খাদ্যে নির্দিষ্ট মাত্রায় সব পুষ্টি উপাদান থাকা প্রয়োজন। মাছ তার দৈহিক বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্যে পুকুরে প্রাপ্ত খাদ্যের ওপর নির্ভরশীল। বাণ্যিজিকভাবে লাভজনক উপায়ে মাছ চাষ করতে গেলে মাছের মজুদ ঘনত্ব বাড়াতে হবে। শিং ও মাগুর মাছের এরূপ চাষের ক্ষেত্রে কেবল মাত্র প্রাকৃতিক খাদ্যের ওপর নির্ভর করে ভাল ফলন পাওয়া সম্ভব নয়। নিবিড় মাছ চাষে সম্পূরক খাদ্যের ব্যবহার খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এক্ষেত্রে প্রাকৃতিক খাদ্যের পাশাপাশি সুষম দানাদার খাদ্য প্রয়োগ আবশ্যক। এতে মোট উৎপাদন অনেকাংশে তুলনামূলকভাবে বেড়ে যায়।

সম্পূরক খাদ্যে পুষ্টি উপাদান
মাছের দেহ গঠন, শক্তি উৎপাদন এবং বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কার্যাবলী সম্পাদনের জন্য আমিষ, চর্বি, শর্করা, ভিটামিন এবং খনিজ লবণ অতীব প্রয়োজন। মাছের প্রজাতি, আকার, চাষের মৌসুম প্রভৃতি বিবেচনা করে সম্পূরক খাদ্য প্রস্তুতে পুষ্টি উপাদানের মাত্রা নির্ধারণ করতে হয়।

খাদ্যে পুষ্টি উপাদানের উৎস
মাছের সম্পূরক খাদ্য প্রস্তুতে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদানের জন্য বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করা হয়ে থাকে। খাদ্যের এসব উপকরণ প্রধানত প্রাণিজাত এবং উদ্ভিদজাত উৎস থেকে পাওয়া যায়। আমাদের দেশে মাছের খাদ্য প্রস্তুতে বহুলভাবে ব্যবহৃত চালের মিহিকুড়া, গমের ভুসি, চালের খুদ, আটা, সরিষার খৈল, তিলের খৈল, সোয়াবিন মিল, ভুট্টা চূর্ণ প্রভৃতি উদ্ভিদজাত এবং ফিসমিল, মিট এণ্ড বোনমিল গবাদিপশুর রক্ত ইত্যাদি প্রাণিজাত উপকরণ। মাছের দেহ বৃদ্ধির জন্য আমিষের ভুমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। খাদ্য উপকরণের পুষ্টি উপাদান আমিষ; হজম প্রক্রিয়ায় ভেঙ্গে এ্যামাইনো এসিডে রূপান্তরিত হয়ে মাছের শরীরে শোষিত হয় এবং মাছের দেহ গঠনে ভূমিকা রাখে। সম্পূরক খাদ্যে প্রাণী ও উদ্ভিদ উভয় উৎস হতে আমিষ পাওয়া যায়। মাছের সম্পূরক খাদ্য তৈরির ক্ষেত্রে প্রাণিজ আমিষের ব্যবহার অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ। প্রাণিজ আমিষে, আমিষের গুণগতমান ভাল হয়ে থাকে, প্রয়োজনীয় অত্যাবশ্যকীয় এ্যামাইনো এসিডসমূহ বিদ্যমান থাকে এবং সহজেই হজম হয়। অপরদিকে উদ্ভিদ থেকে প্রাপ্ত আমিষের পরিমাণ খুবই কম। বিভিন্ন গবেষণার মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা দেখেছেন যে, প্রাণী ও উদ্ভিদজাত আমিষের সংমিশ্রণে তৈরি খাদ্য অধিকতর উত্তম। মাছের খাদ্যে আমিষের পাশাপাশি পরিমাণমত শর্করা, চর্বি বা ফ্যাট, ভিটামিন ও খনিজ জাতীয় পুষ্টি উপাদান পরিমাণ মত অবশ্যই থাকতে হবে। সাধারণতঃ শিং ও মাগুর মাছ চাষে ৩০-৩৫% আমিষ সমৃদ্ধ খাবার প্রয়োজন। কারণ শিং ও মাগুর মাছ এই ধরনের খাবার খেতে খুব পছন্দ করে।

খাদ্য উপকরণ নির্বাচনে বিবেচ্য বিষয়
আমাদের অধিকাংশ মৎস্য চাষি সম্পূরক খাবার হিসেবে প্রধানত সরিষার খৈল, চাউলের কুড়া ও গমের ভুসি ব্যবহার করে। এ ছাড়াও অনেক মাছ চাষি এমন কিছু খাদ্য উপকরণ ব্যবহার করেন যেগুলো আর্থিক ভাবে লাভজনক নয়, এমনকি সেগুলো অনেক সময় পুকুরের পরিবেশের জন্য তিকর হয়ে থাকে। যেমন অনেক মাছ চাষি খাদ্যের উপকরণ হিসেবে ধানের তুষকে খাদ্যে ব্যবহার করেন যার পুষ্টিগত কোন মূল্য নাই এবং পুকুরের পরিবেশের জন্য তিকর। এসব বিষয় ছাড়াও দেশী শুটকি মাছের দ্বারা তৈরি ফিশমিল মাছের খাদ্য তৈরিতে ব্যবহার করার সময় অবশ্যয় নিশ্চিত হতে হবে যে, শুটকি প্রস্তুতের সময় তিকর ডিডিটি বা অন্য কোন তিকর কীটনাশক ব্যবহার করা হয়েছে কিনা। কারণ এরূপ তিকর কীটনাশক মিশ্রিত ফিশমিল দ্বারা খাদ্য প্রস্তুত করলে নার্সারি ও মজুদ পুকুরের শিং ও মাগুর মাছের ব্যাপক মড়ক দেখা দিতে পারে। পুকুরে সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগের উদ্দেশ্য হলো মাছের অধিক উৎপাদন নিশ্চিত করা। সে কারণে মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহারের জন্য উপকরণ নির্বাচনের সময় বেশ কিছু বিষয় বিবেচনা করা উচিত যা নিচে উল্লেখ করা হলোঃ
ক্স    স্থানীয় ভাবে উপকরণসমূহের প্রাচুর্যতা
ক্স    উপকরণের পুষ্টিমান
ক্স    উপকরণের মূল্য
ক্স    মাছের খাদ্যাভ্যাস বা পুষ্টি চাহিদা
ক্স    চাষির আর্থিক সঙ্গতি
ক্স    উচ্চ খাদ্য পরিবর্তন হার
ক্স    উপকরণের আকার
ক্স    উপকরণ সংরণের মেয়াদ।

শিং ও মাগুর মাছের পুষ্টি চাহিদা
দ্রুত বৃদ্ধি অর্থাৎ মাছের বর্ধিত উৎপাদন নিশ্চিত করার জন্য মাছের সূষম খাবারে প্রয়োজনীয় উপাদান থাকা আবশ্যক। আবার এসকল উপাদানের মধ্যে আমিষের চাহিদা বেশি। মাছের খাদ্য তৈরিতে যেসব উপাদান ব্যবহার করা হয় তার প্রত্যেকটিতে খাদ্যের বিভিন্ন উপাদান যেমন শর্করা, চর্বি ও খনিজ লবণ কমবেশি বিদ্যমান থাকে। এসব খাদ্য উপরকণ দ্বারা আমিষের চাহিদা পূরণ হলে অন্যান্য পুষ্টি উপাদানের তেমন কোন অভাব পরিলতি হয় না। বয়স ভিত্তিক শিং ও মাগুর মাছের আমিষের শতকরা চাহিদা ধানি ও অঙ্গুলি পোনা এবং বয়স্ক  মাছের জন্য যথাক্রমে ৪০, ৩৫ এবং ৩০ ভাগ।

শিং ও মাগুর মাছের দৈহিক ওজনের সাথে খাদ্য প্রয়োগের মাত্রার সম্পর্ক
গড় ওজন (গ্রাম)    দৈনিক খাদ্যের পরিমাণ (%)
১-৩                         ১৫-২০
৪-১০                       ১২-১৫
১১-৫০                      ৮-১০
৫১-১০০                     ৫-৭
>১০১                       ৩-৫

পুকুরে খাদ্য প্রয়োগ মাত্রা
মাছের খাদ্য গ্রহণ মাত্রানির্ভর করে পানির ভৌত ও রাসায়নিক গুণাবলীর অনুকুল অবস্থার ওপর। তাপমাত্রা বাড়লে মাছের বিপাকীয় কার্যক্রমের হার বেড়ে যায়। ফলে খাদ্য চাহিদা বৃদ্ধি পায়। একইভাবে পানির তাপমাত্রা কমে গেলে খাদ্য চাহিদাও কমে যায়। পানির তাপমাত্রা ১০μ সে. এর বেশি হলে খাদ্য গ্রহণ মাত্রা দি^গুণ হয়ে যায়, একই ভাবে তাপমাত্রা ১০μ সে. কমে গেলে মাছের খাদ্য গ্রহণ হার অর্ধেকে নেমে য়ায়। পনির পিএইচ ৭-৮.৫০ ও পানিতে দ্রবিভূত অক্সিজেনের মাত্রা বাড়লে মাছের খাদ্য চাহিদা বৃদ্ধি পায়। বিপরীতভাবে পিএইচ ও অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাবার কারণে খাদ্য গ্রহণ কমে যায়। এ ছাড়াও মাছ ছোট অবস্থায় তুলনামূলক বেশি খাবার গ্রহণ করে থাকে।

সম্পূরক খাদ্য তৈরি
সম্পূরক খাবার দুইভাবে প্রস্তুত করা যেতে পারে।
ক) বাণিজ্যিক সম্পূরক খাদ্যঃ বর্তমানে বেসরকারি উদ্যোগে মাছের খাবার বাণিজ্যিক ভাবে প্রস্তুত করার জন্য বহু খাদ্য মিল স্থাপিত হয়েছে। এসকল কারখানায় মাছের বয়সের ওপর ভিত্তি করে বিভিন্ন মানের খাবার প্রস্তুত করা হচ্ছে। মাছ চাষিগণ তার চাহিদা অনুযায়ী খাদ্য বাজার থেকে সংগ্রহ করে সহজেই পুকুরে প্রয়োগ করতে পারেন।
খ) খামারে প্রস্তুতকৃত সম্পূরক খাদ্যঃ খামারে আমরা দুভাবে খাদ্য প্রস্তুত করতে পারি। বিভিন্ন ধরনের খাদ্য উপকরণ প্রয়োজন মাফিক একত্রে ভালভাবে মিশিয়ে চাষি নিজ হাতেই খাদ্য প্রস্তুত করে পুকুরে প্রয়োগ করতে পারেন অথবা খাদ্য প্রস্তুতকারী মেশিন এর সাহায্যে বিভিন্ন উপকরণ পরিমাণমত মিশিয়ে চাহিদা অণুযায়ী দানাদার সম্পূরক খাদ্য প্রস্তুত করতে পারেন।

খাদ্যে উপকরণসমূহ বাজার থেকে কিনে নিজস্ব পিলেট মেশিন দ্বারা খাদ্য তৈরি করা সবচেয়ে নিরাপদ। এ ক্ষেত্রে শিং ও মাগুর মাছের জন্য নিম্নহারে (Composition) খাদ্যের বিভিন্ন উপকরণ মিশিয়ে স্বল্প মূল্যে কিন্তু ভাল মানের খাদ্য প্রস্তুত করা যেতে পারে।

উপকরণের বিবরণ    শতকরা হার 
ফিশমিল                        ২০
সোয়বিন চূর্ণ                    ৮
অটোকুড়া                       ৩০
ভুট্টাচূর্ণ                           ৫
গমের ভুসি                     ১২
চিটাগুড়/রাব                    ৫
সরিষার খৈল                   ২০
ভিটামিন প্রিমিক্স        ১ গ্রাম/কেজি

সরিষার খৈল খাদ্য প্রস্তুতের ২৪ ঘন্টা পূর্বেই পরিমাণমত পানিতে ভিজিয়ে রাখতে হবে অত:পর অন্য সব উপকরণের সাথে ভালভাবে মিশিয়ে খাদ্য প্রস্তুতের সময় পানি এমনভাবে মিশাতে হবে যেন খাবার অনেকটা শুকনা খাবারের মত হয়।

নমুনায়ন ও সম্পূরক খাদ্য প্রয়োগ
নমুনাকরণের মাধ্যমে পুকুরের মোট মাছের জীবভর (ইরড়সধংং) হিসাব করে খাদ্য প্রয়োগের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে। নমুনা সংগ্রহের ক্ষেত্রে একটি ঝাঁকি জাল ব্যবহার করা যেতে পারে এবং মজুদ ঘনত্বের ৫-১০% মাছের নমুনা সংগ্রহ করা উত্তম। ধৃত মাছের গড় ওজন বের করে এবং মাছের বাঁচার হার ৯০% ধরে মোট জীবভর নির্ণয় করতে হবে। শিং ও মাগুর মাছ চাষের েেত্র দৈনিক প্রয়োজনীয় খাবার সমান তিনভাগে করে সকাল, দুপুর ও বিকালে প্রয়োগ করতে হবে। মাছের আকার ৩০ গ্রাম হলে মোট খাদ্যকে দুই ভাগ করে সকাল ও বিকালে প্রয়োগ করতে হবে।  প্রতি ১৫ দিন অন্তর মাছের নমুনায়ন করে মাছের জীবভর পরিমাপ করে খাদ্য সমন্বয় করতে হবে।

পুকুরে খাদ্য প্রয়োগ করার পদ্ধতি
নিম্নরূপে পুকুরে খাদ্য প্রয়োগ করা যেতে পারে-
ক্স    সমস্ত পুকুরে সমান ভাবে ছিটিয়ে প্রয়োগ করা।
ক্স    নির্ধারিত স্থানে প্রয়োগ করা।
ক্স    খাদ্যদানীতে প্রয়োগ করা। খাদ্যদানীর সংখ্যা পুকুরে মজুদকৃত মাছের সংখ্যা ও আকারের ওপর ভিত্তি করে ঠিক করতে হবে।
ক্স    খাবার একটি ছিদ্র যুক্ত ব্যাগে ভরে পানিতে ঝুলিয়ে দেয়া।

পুকুরে খাদ্য প্রয়োগের সময় নিচে উল্লেখিত বিষয়াবলী অনুসরণ করা প্রয়োজনঃ
ক্স    খাদ্য প্রয়োগের জন্য সুবিধামত যে কোন একটি বা দুটির মিশ্র পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। কারণ বিদ্যমান সব পদ্ধতির কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে।
ক্স    খাদ্য প্রতিদিন নির্দিষ্ট সময়ে, নির্দিষ্ট স্থানে পরিমিত পরিমাণে প্রয়োগ করতে হবে।
ক্স    পানি অতিরিক্ত সবুজ বা দুষিত হয়ে পড়লে বা বৃষ্টি হলে খাদ্য প্রয়োগ কমাতে হবে।
ক্স    মাছ যে কোন কারণে পীড়ন (stress) অবস্থার সম্মুখীন হলে খাদ্য প্রয়োগ কমিয়ে দিতে হবে এবং প্রয়োজনে খাদ্য দেয়া বন্ধ করে দিতে হবে। অন্যথায় খাদ্য অপচয় হয়ে পরিবেশ বিনষ্ট করবে।

খাদ্য গুদামজাতকরণ
সম্পূর্ণ দানাদার খাদ্য তৈরিতে খাদ্য উপকরণ গুদামজাতকরণের প্রয়োজন। গুদামজাতকরণের সময়ে খাদ্য উপকরণের ওজন, গুণগতমান এবং সবোপরি অর্থনৈতিক তি হতে পারে। এজন্য সুষ্ঠুভাবে গুদামজাতকরণ আবশ্যক।
খাদ্য উপকরণগুলো গুদামজাতকরণের সময় নিচেলিখিত বিষয় গুলি বিবেচনায় রাখতে হবেঃ
তাপমাত্রাঃ অতিরিক্ত তাপমাত্রায় সংরতি খাদ্যের পুষ্টিমান হ্রাস পায়। অণুজীবসমূহ ২৬-৩৭μ সে. তাপমাত্রায় ভাল জন্মাতে পারে এবং খাদ্যের তি সাধন করে।
আর্দ্রতার প্রভাবঃ খাদ্যের আর্দ্রতার পরিমাণ ১০ ও আপেকি আর্দ্রতা ৬৫ শতাংশের বেশি থাকলে ছত্রাক/পোকা-মাকড় বেশি জন্মাতে পারে এবং তাদের শরীরের পাঁচক রস (এনজাইম) খাদ্যের গুণগতমান নষ্ট করে।

সঠিক গুদামজাতকরণের উপায়
ক) শুকনা পিলেট খাদ্য ও খাদ্য উপাদানের ক্ষেত্রে-
ক্স    পরিস্কার শুকনা ও পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল করে এরূপ ঘরে খাদ্য মজুদ করা যেতে পারে।
ক্স    সরাসরি সূর্যের আলোতে খাদ্য সংরণ করা যাবে না।
ক্স    মেঝে থেকে ১৫-২০ সেমি. উপরে কাঠ বা বাঁশের মাচার উপরে খাদ্য সংরণ করতে হবে।
ক্স     তিন মাসের বেশি খাদ্য বা খাদ্য উপকরণ গুদামজাত করে রাখা সমীচীন নয়।
খ) আর্দ্র/ভিজা খাদ্যের ক্ষেত্রে-
ক্স    ভিজা খাবার তৈরি করার সাথে সাথে পুকুরে প্রয়োগের ব্যবস্থা করতে হবে, বেশি সময় সংরণ করলে খাবার পঁচে দূর্গন্ধ ছড়ায় এবং খাদ্যের খাদ্যমান নষ্ট হয়ে যায়। ভিজা সরিষার খৈল কয়েকদিন রাখলে খৈলের পুষ্টি উপাদান ভেঙ্গে খনিজায়ন ঘটে এবং এই খৈল তখন খাদ্য হিসেবে ব্যবহার উপযোগি থাকে না।
ক্স    ভিটামিন ও খনিজ লবণসমূহ কালো পাত্রে বায়ু শুন্য অবস্থায় সংরণ করতে হবে।


 

তথ্যসূত্রঃ মৎস্য অধিদপ্তর, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রনালয়, ঢাকা

 

Leave a Comment

You must be logged in to post a comment.