আনারস চাষ

বাংলাদেশের অনেক স্থানেই আনারস চাষ করা হয়। তবে মূলত সিলেট, মৌলভীবাজার, চট্টগ্রাম, পার্বত্য চট্টগ্রাম ও টাঙ্গাইল জেলায় ব্যাপক আকারে আনারস চাষ হয়। সাধারণত চারা রোপণের ১৫-১৬ মাস পর মাঘ মাসের মাঝামাঝি থেকে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে আনারস গাছে ফুল আসে। আনারস একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসলও বটে। পুষ্টিগুণের দিক থেকেও আনারস অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কারণ এতে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ রয়েছে।

আমাদের দেশে সারাবছরই বিভিন্ন ধরনের শাকসবজি ও ফলের চাষ করা হয়। আনারস একটি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু ফল। এর বৈজ্ঞানিক নাম Anarus comosus. বাংলাদেশের অনেক স্থানেই আনারস চাষ করা হয়। তবে মূলত সিলেট, মৌলভীবাজার, টাঙ্গাইল, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জেলায় ব্যাপক আকারে আনারস চাষ হয়। আনারস একটি গুরুত্বপূর্ণ অর্থকরী ফসল।

পুষ্টিমান

আনারসে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ আছে।

বাজার সম্ভাবনা

আনারস অত্যন্ত সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। টিনজাত খাদ্য হিসেবে আনারস সংরক্ষণ করা যায়। আনারস ফল হিসেবে খাওয়ার পাশাপাশি আনারস দিয়ে জ্যাম, জেলি ও জুস তৈরি করা যায়। আনারস চাষ করে পারিবারিক চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বাড়তি আয় করা সম্ভব। এছাড়া দেশের চাহিদা মেটানোর পর অতিরিক্ত উৎপাদন বিদেশে রপ্তানি করা সম্ভব। এক্ষেত্রে বিভিন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান সহায়তা দিয়ে থাকে। আনারস বিদেশে রপ্তানি করার জন্য এসব প্রতিষ্ঠানের সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে।

আনারস উৎপাদন কৌশল

চাষের উপযোগী পরিবেশ ও মাটি

জলবায়ু – আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি থেকে অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি সময় আনারস চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। তবে সেচের সুবিধা থাকলে মাঘ মাসের মাঝামাঝি থেকে ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি সময়েও চারা লাগানো যায়।

আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি থেকে অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি সময় আনারস চারা লাগানোর উপযুক্ত সময়। তবে সেচের সুবিধা থাকলে মাঘ মাসের মাঝামাঝি থেকে ফাল্গুন মাসের মাঝামাঝি সময়েও চারা লাগানো যায়। – See more at: http://infokosh.gov.bd/atricle/%E0%A6%86%E0%A6%A8%E0%A6%BE%E0%A6%B0%E0%A6%B8-%E0%A6%9A%E0%A6%BE%E0%A6%B7#sthash.CNjvQQLn.dpuf
মাটির প্রকৃতি

মাটির প্রকৃতি – দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি আনারস চাষের জন্য বেশি উপযোগী।

জাত

১. হানিকুইন: পাকা আনারসের শাঁস হলুদ বর্ণের হয়। চোখ সূঁচালো ও উন্নত। গড় ওজন প্রায় এক কেজি। পাতা কাঁটাযুক্ত ও পাটল বর্ণের। হানিকুইন বেশ মিষ্টি আনারস।

২. জায়েন্ট কিউ: পাকা আনারস সবুজাভ ও শাঁস হালকা হলুদ, চোখ প্রশস্ত ও চেপ্টা। গড় ওজন প্রায় দুই কেজি। গাছের পাতা সবুজ ও প্রায় কাঁটাবিহীন।

৩. ঘোড়াশাল: পাকা আনারস লালচে এবং ঘিয়ে সাদা রঙের হয়। চোখ প্রশস্ত গড় ওজন প্রায় ১.২৫ কেজি। পাতা কাঁটাযুক্ত, চওড়া ও ঢেউ খেলানো থাকে।

বংশ বিস্তার

স্বাভাবিক অবস্থায় আনারসের বীজ হয় না। তাই বিভিন্ন ধরণের চারার মাধ্যমে আনারসের বংশ বিস্তার হয়ে থাকে। সাধারণত পার্শ্ব চারা, বোঁটার চারা, মুকুট চারা ও গুঁড়ি চারা দিয়ে আনারসের বংশ বিস্তার হয়ে থাকে। এর মধ্যে পার্শ্ব চারা বাণিজ্যিকভাবে চাষের জন্য সবচেয়ে ভালো।

জমি তৈরি

১. মাটি ঝরঝরে করে চাষ ও মই দিয়ে জমি সমতল করে নিতে হবে যাতে বৃষ্টির পানি কোন স্থানে জমে না থাকতে পারে।

২. জমি থেকে ১৫ সে.মি. উঁচু এবং এক মিটার প্রশস্ত বেড তৈরি করতে হবে।

৩. এক বেড থেকে অপর বেডের মধ্যে ৫০-১০০ সে.মি. দূরত্ব রাখতে হবে।

চারা রোপণ পদ্ধতি

১. এক মিটার প্রশস্ত বেডে দুই সারিতে চারা রোপণ করতে হবে।

২. সারি থেকে সারির দূরত্ব ৫০ সে.মি. এবং চারা থেকে চারার দূরত্ব ৩০-৪০ সে.মি. রাখতে হবে।

সার প্রয়োগ

কৃষকদের মতে গুণগত মানসম্পন্ন ভালো ফলন পেতে হলে আনারস চাষের জমিতে যতটুকু সম্ভব জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। মাটি পরীক্ষা করে মাটির ধরণ অনুযায়ী সার প্রয়োগ করতে হবে। তবে জৈব সার ব্যবহার করলে মাটির গুণাগুণ ও পরিবেশ উভয়ই ভালো থাকবে। বাড়িতে গবাদি পশু থাকলে সেখান থেকে গোবর সংগ্রহ করা যাবে। নিজের গবাদি পশু না থাকলে পাড়া-প্রতিবেশি যারা গবাদি পশু পালন করে তাদের কাছ থেকে গোবর সংগ্রহ করা যেতে পারে। এছাড়া ভালো ফলন পেতে হলে জমিতে আবর্জনা পচা সার ব্যবহার করা যেতে পারে। বাড়ির আশেপাশে গর্ত করে সেখানে আবর্জনা, ঝরা পাতা ইত্যাদির স্তুপ করে রেখে আবর্জনা পচা সার তৈরি করা সম্ভব।

সেচ ও নিষ্কাশন

* শুকনা মৌসুমে আনারস ক্ষেতে সেচ দেওয়া খুবই প্রয়োজন।
* বর্ষা মৌসুমে বেশি বৃষ্টির সময় গাছের গোড়ায় যাতে পানি জমে না থাকে সেজন্য নালা কেটে পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করতে হবে।

রোগবালাই ও তার প্রতিকার

আনারস চাষের জমিতে পোকার আক্রমণ হলে স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত জৈব কীটনাশক ব্যবহার করা যেতে পারে। এতে পোকা দমন না হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে পরামর্শের জন্য যোগাযোগ করা যেতে পারে।

চাষের সময়ের পরিচর্যা

১. চারা বেশি লম্বা হলে ৩০ সে.মি. পরিমাণ রেখে আগার পাতা সমান করে কেটে দিতে হবে।

২. আনারসের জমি সর্বদা আগাছামুক্ত রাখতে হবে।

ফল সংগ্রহ

সাধারণত চারা রোপণের ১৫-১৬ মাস পর মাঘ মাসের মাঝামাঝি থেকে চৈত্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে আনারস গাছে ফুল আসে। জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি থেকে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি সময়ে আনারস পাকে। পাকা ফল সংগ্রহ করতে হবে।

উৎপাদিত ফলের পরিমাণ

প্রতি বিঘা জমিতে প্রায় ৩-৪ টন হানি কুইন আনারস ও ৪-৫ টন জায়েন্ট কিউ আনারস জন্মে।

মূলধন

এক বিঘা (৩৩ শতাংশ) জমিতে আনারস চাষের জন্য প্রায় ২০০০০ টাকার প্রয়োজন হবে। মূলধন সংগ্রহের জন্য ঋণের প্রয়োজন হলে নিকট আত্মীয়স্বজন, সরকারি ও বেসরকারি ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও)- এর সাথে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এসব সরকারি ও বেসরকারি ঋণদানকারী ব্যাংক বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান (এনজিও) শর্ত সাপেক্ষে ঋণ দিয়ে থাকে।

প্রশিক্ষণ

আনারস চাষের আগে অভিজ্ঞ কারও কাছ থেকে আনারস চাষ সম্পর্কে খুঁটিনাটি জেনে নিতে হবে। এছাড়া চাষ সংক্রান্ত কোন তথ্য জানতে হলে স্থানীয় কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের ইউনিয়ন পর্যায়ে কৃষি কর্মকর্তা অথবা উপজেলা কৃষি অফিসে যোগাযোগ করা যেতে পারে। এছাড়া বাংলাদেশের প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কেন্দ্র আছে। এসব প্রশিক্ষণ কেন্দ্র নির্ধারিত ফি এর বিনিময়ে কৃষি বিষয়ক প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে।

আনারস একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে আনারস চাষ করে পারিবারিক পুষ্টির চাহিদা পূরণ করার পাশাপাশি অতিরিক্ত উৎপাদন বাজারে বিক্রি করে বাড়তি আয় করা সম্ভব।

সচরাচর জিজ্ঞাসা

প্রশ্ন ১ : কোন মাটি আনারস চাষের জন্য উপযোগী ?

উত্তর : দো-আঁশ ও বেলে দো-আঁশ মাটি আনারস চাষের জন্য উপযোগী।

প্রশ্ন ২ : আনারসের চারা লাগানোর উপযুক্ত সময় কোনটি ?

উত্তর : আশ্বিন মাসের মাঝামাঝি থেকে অগ্রহায়ণ মাসের মাঝামাঝি সময় আনারসের চারা লাগানোর জন্য উপযুক্ত।

প্রশ্ন ৩ : আনারসে কোন ভিটামিন পাওয়া যায় ?

উত্তর : আনারসে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন ‘এ’, ‘বি’ ও ‘সি’ আছে।

তথ্যসূত্র : কৃষি প্রশিক্ষণ ম্যানুয়াল, জুন ২০০৭, Microfinance for Marginal and Small Farmers (MFMSF) Project, প্রজেক্ট ম্যানেজমেন্ট সেল-১, পল্লী কর্ম-সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ), ঢাকা।

Leave a Comment

You must be logged in to post a comment.