কিশ্ষিবাতা কইরা এত সম্মান পামু কোন দিনও ভাবিনাই!

‘আম্মারে কি যে আনন্দ! স্বপনেও ভাবিনাই পাঁচ লাখ টাকা পুরস্কার পামু! এই দুই হাত দিয়া ১০ বছর ধইরা শুধু মাটি কোপাইছি, আঁঠি পুতছি আর সবজি তুলছি, তোমাগো চাচারে লগে নিয়া এতবড় হোটেলে যাওন আর কিশ্ষিবাতা (কৃষিকাজ) কইরা এত সম্মান পামু জীবনেও ভাবিনাই। আল্লাহর দারে আমার শুকরিয়ার শেষ নাই।’ মুখভর্তি পান নিয়ে লাল টুকটুকে ঠোটে কথা বলছিলেন হোসনেয়ারা বেগম।

4পিরোজপুর জেলার ব্রাক্ষণকাঠি গ্রামের  ৪৮ বছরের হোসনেয়ারা বেগমের ২ বিঘার সবজি ক্ষেত, যার একপাশে ছোট থাকার ঘর। সারাদিন অক্লান্ত পরিশ্রম করে কোন লোক ছাড়াই জমি প্রস্তুত হতে শুরু করে সবজি বিক্রয় পর্যন্ত সকল কার্যক্রম নিজ হাতে করেন এবং ভ্যানে করে সবজি বিক্রয় করেন। এভাবেই সার বছর কর্মরত থাকেন হোসনেয়ারা।
একমাত্র উপার্যনকারী স্বামী ৬০ বছরের আবুয়াল কঠিন রোগে আক্রান্ত হয়ে শয্যাশায়ী ছিলেন। এমতবস্থায়  ছেলে-মেয়ে নিয়ে হোসনেয়ারা দিশেহারা হয়ে পরেন। বাধ্য হয়ে ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বাড়ির সামনে থাকা এক বিঘে জমি বর্গা নিয়ে চাষাবাদ শুরু করেন। উৎপাদিত ফসল বিক্রয় করে যা আয় হত তা দিয়ে কোন রকমে তার সংসার চলত। এরই মধ্যে ব্র্যাকের পরামর্শ ও প্রশিক্ষণ পেয়ে আগাম জাতের হাইব্রিড সবজি চাষবাদ শুরু করেন। পরিবারের চাহিদা মিটিয়ে উদ্বৃত সবজি বিক্রয় করে তিনি লাভবান হোন। বর্তমানে তার সবজি ক্ষেত লালশাক, পুইশাক, চিচিংগাসহ বিভিন্ন সবজিতে ভরপুর। বছরের শেষের দিকে পিরোজপুরের ডিসি তার ক্ষেত পরিদর্শন করতে এসে নাম দিলেন দোতালা সবজি ক্ষেত।

M1এই সাফল্যের ধারাবাহিকতায় বিগত বছর হাসনেয়ারা বেগমকে স্ট্যান্ডার্ড চ্যাটার্ড ব্যাংক এর বাৎসরিক সেরা কৃষক এর প্রথম পুরস্কার হিসেবে পাঁচলক্ষ টাকা প্রদান করা হয়। বর্তমানে তার স্বামীকে নিয়ে তিনি পূর্ন উদ্যোমে সবজি চাষাবাদ করছেন। ‘এভাবে ফসল উৎপাদনে ভালো সাফল্য পাওয়ায় অনেকেই আমার কাছ থেকে পরামর্শ নিতে আসতেছে’ বলেন হোসনেয়ারা। তার একমাত্র লক্ষ্য হলো পরিবেশবান্ধব সবজি উৎপাদনে সকলকে উৎসাহিত করা।

 


Writer-Umma Salma Tonnyরিপোর্টঃ উম্মে সালমা তন্বী
ব্র্যাক কৃষি ও খাদ্য নিরাপত্তা কর্মসূূচী

Leave a Comment

You must be logged in to post a comment.